প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে বের হন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকেই সারা ডিসেম্বরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন লাবলু ভূঁইয়া। নতুন প্রজন্মের হাতে পতাকা তুলে দিতেই টাঙ্গাইলের সর্বত্রই ফেরি করে তিনি বিক্রি করেন পতাকা।
দুপুরে ঢাকা-প গড় মহাসড়ক সংলগ্ন বীরগঞ্জের সেন্টারমোড় নামক স্থানের সামনে কথা হয় পতাকার ফেরিওয়ালা লাবলু ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই পতাকা বিক্রি করি না। ভালোবাসি বলেই রাস্তায় পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াই। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি থেকে পতাকার ফেরিওয়ালা হয়েছি।’
সরু বাঁশে ছোট-বড় পতাকা বেঁধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশের নানা প্রান্তে। সারা দিন হেঁটে জেলা-উপজেলা শহরে পতাকা বিক্রি করেন তিনি। পতাকা তুলে দেন স্বাধীন দেশের নতুন প্রজন্মের হাতে। লাবুলু ভূঁইয়া ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিদাবাদ গ্রামের কাশেম ভূঁইয়ার ছেলে। ফেরি করেই তাঁর সংসার চলে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। বড় ছেলে সংসার দেখাশোনা করেন। ছোট ছেলে পড়াশোনা করেন। ১০ বছর ধরেই তাঁর পেশা মূলত ফেরিওয়ালা। প্রথমে তিনি ঠাকুরগাঁও সদরে এসছেন। তিনি মাস খানেক আগেই ঠাকুরগাঁও সদরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আছেন। সেখান থেকেই ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন। দুই দিন আগে তিনি বীরগঞ্জে এসেছেন। বীরগঞ্জের মহাসড়ক ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে বিক্রি করেন পতাকা।
লাবুলু ভূঁইয়া বলেন, ‘মাসের বেশির ভাগ সময়েই বাড়ির বাইরে থাকি। সিলভার ও স্টিলের হাঁড়ি-পাতিল ফেরি করি। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে বিজয় দিবস পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করি।’
লাবুলুর কাছে পাওয়া যায় বিভিন্ন আকারের পতাকা। বড় আকারের পতাকার দাম ২৫০ থেকে ২০০ টাকা। মাঝারি ১৫০ টাকা, ছোট আকারের পতাকার দাম ৬০ থেকে ৫০ টাকা। মাথায় বাঁধার জন্য ফিতাযুক্ত পতাকার দাম ২০ টাকা, আর রাবারের ফিতা ২৫, লাঠিতে বাঁধায় জন্য পতাকার দাম ১৫ টাকা। প্রতিদিন গড়ে তিনি ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার পতাকা বিক্রি করেন। বিজয় দিবস যত কাছে আসে, বিক্রি ততই বাড়ে। বিজয় দিবসে পতাকা বিক্রি করে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয় বলে তিনি জানান।
লাবুলু ভূঁইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বাংলার বীর সন্তানেরা আমাদের একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। উপহার দিয়েছেন সুন্দর একটি পতাকা। তাঁদের দেওয়া লাল-সবুজ পতাকা বুকে ধারণ করে রেখেছি। সবার কাছে বিজয়ের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি পতাকার মধ্য দিয়ে।’
ক্রেতা মোস্তফা বলেন, ‘১৫ টাকা দিয়ে একটা পতাকা কিনেছি। বিজয়ের মাস চলছে, তাই দেশের পতাকা গাড়িতে টানিয়ে রাখব।’